লাগামহীন ঘোড়ার পিঠে বীমা শিল্প!

শিপন ভূঁইয়া: লাগামহীন ঘোড়া কথাটি আক্ষরিক অর্থে লাগাম ছাড়া দৌড়ানো ঘোড়াকে বুঝায়। রুপক অর্থে নিয়ন্ত্রণহীন পরিস্থিতি বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না! বাংলাদেশের বীমা শিল্প কি লাহামহীন ঘোড়ার মতই চলছে নাকি লাগাম দুর্বল!

বর্তমানে দেশের ৩২টি বীমা কোম্পানি ঝুঁকিতে রয়েছে বলে এমন তথ্য জানিয়েছেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ।

আইডিআরএ’র তথ্য মতে, ১৫ টি লাইফ ইন্স্যুরেন্স উচ্চ ঝুঁকিতে থাকার পাশাপাশি আরও ১৭টি নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিও ঝুঁকিতে রয়েছে। মাত্র ছয়টি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে। উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা কোম্পানিগুলোর সংকট আর নিরসনের পর্যায়ে নেই। তবে ঝুঁকিতে থাকা কোম্পানিগুলোর সমস্যা নিরসনযোগ্য। বর্তমানে জীবন বীমার ক্ষেত্রে ৪৫ শতাংশ এবং নন-লাইফ বীমার ক্ষেত্রে প্রায় ৪৭ শতাংশ দাবি অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে।

২০২৪ সাল শেষে লাইফ ইন্স্যুরেন্স খাতে ১৩ লাখ গ্রাহকের ৪ হাজার ৪১৪ কোটি টাকার দাবি অনিষ্পন্ন রয়েছে। এ ছাড়া বিগত ১৪ বছরে ৫৪ লাখ পলিসি বাতিল হয়েছে। বর্তমানে চালু থাকা পলিসির সংখ্যা ৭১ লাখ।

জিডিপি অনুপাতে বীমা খাতের অবদান কমছে বছর বছর। যেখানে বীমার পেনিট্রেশন বাড়ার কথা সেখানে শুধু কমেই চলছে! ২০১০ সালে জিডিপিতে বীমা খাতের অবদান ছিল শূন্য দশমিক ৯৪ শতাংশ। অথচ ২০২৩ সালে তা কমে দশমিক ৪১ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০২৪ সালে তা আরও কমেছে। এ যেনো লাগামহীন ঘোড়ার পিঠে চড়ে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশের বীমা শিল্প!

আইডিআরএ যেখানে বলছে যে, উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা কোম্পানিগুলোর সংকট আর নিরসনের পর্যায়ে নেই। সেখানে উচ্চ ঝুঁকির কোম্পানি কি করে এখনো নতুন পলিসি বিক্রয় করে! উচ্চ ঝুঁকির কোম্পানির নতুন পলিসি বিক্রয় আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নয় কি? এমন সিদ্ধান্তের ফলে খাদে পড়া বীমা শিল্প চিরতরে ডুবে যাওয়ার আশংঙ্কা রয়েছে।

পরিশেষে, লাগামহীন ঘোড়ার পিঠ থেকে বীমা শিল্পকে বাঁচাতে হবে। সুরক্ষায় রাখতে হবে গ্রাহকের আমানত। নতুন আইন ও চলমান আইনের সঠিক প্রয়োগ করে বীমা শিল্পকেই সুরক্ষা করতে হবে।