ইন্দোনেশিয়ার দৃষ্টি এবার বীমায়

পাপলু রহমান: গত বছর ইন্দোনেশিয়ায় সৃষ্ট ভূমিকম্প আর সুনামির খবর এখনও টাটকা। দেশটির সুলাওয়েসি দ্বীপের পালু শহরে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর সুনামি হয়। সুনামিতে সৃষ্ট প্রায় ছয় মিটার উঁচু ঢেউ পুরো বিশ্বকে অবাক করে দেয়। বড় এ দুটি দুর্যোগের আঘাতে অনেক মানুষ প্রাণ হারায়। লন্ডভন্ড হয়েছিল উপকূলীয় এলাকা। দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার ধারণার বাইরে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।

ভয়াবহ এসব দুর্যোগে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে দেশটির অর্থনীতিতে। বর্তমানে দুর্যোগ পরবর্তী অবস্থা কাটাতে তহবিল সংকটে পড়েছে। এজন্য ইন্দোনেশিয়া সরকার এবার বেশ সতর্ক। দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচতে দেশটির বীমাখাতকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এ নিয়ে বীমাকারীদের সঙ্গে তহবিল সংক্রান্ত আলোচনাও করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

এদিকে ২০০০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশটিতে বছরে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় ১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অথচ ইন্দোনেশিয়ায় ইন্স্যুরেন্স পেনিট্রেশন হার (জিডিপিতে শতকরা হারে বীমার অবদান) ১ শতাংশেরও কম।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, বীমা না থাকলে দুর্যোগের পর ক্ষয়ক্ষতি পূরণ অনেক কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল হয়ে উঠে। সরকারি তহবিল থেকে অর্থ দিতে হয়। ফলে দেশের অর্থনীতি ও মানুষের জীবন-জীবিকার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এজন্য তারা দুর্যোগ মোকাবেলায় বিনিয়োগ ও বীমা এই দুটি বিষয় এগিয়ে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ ইন্দোনেশিয়া। দেশটি প্রশান্ত মহাসাগরের ‘রিং অব ফায়ারের’ ওপর অবস্থান করছে। ফলে অনেক সুপ্ত ও ভয়ানক আগ্নেয়গিরি রয়েছে দেশটিতে। টেকটনিক প্লেটগুলোর সংঘর্ষ আর আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের কারণে ইন্দোনেশিয়া প্রায়ই ছোট-বড় ভূমিকম্প হয়। গেল বছর ৫ আগস্টের ভূমিকম্পেও দেশটিতে ৪৬০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়।

ইন্দোনেশিয়া সবচেয়ে বড় ভয়াবহ ভূমিকম্পের শিকার হয় ২০০৪ সালে। সুমাত্রা উপকূলে ৯.১ মাত্রার ভূমিকম্পের জেরে সৃষ্ট সুনামিতে শুধু ইন্দোনেশিয়ার এক লাখ ৬৮ হাজার মানুষ নিহত হয়। এ ছাড়া আশপাশের অঞ্চল মিলিয়ে নিহত হয় মোট দুই লাখ ২০ হাজার মানুষ। এ ছাড়া ২০১০ সালে সুমাত্রা উপকূলে আরেক ভূমিকম্পে ৪৩০ জন নিহত হয় এবং জাভা দ্বীপে ভূমিকম্প-সুনামিতে নিহত হয় ৬০০ জনের বেশি। সর্বশেষ ২০১৮ সালে সুলাওয়েসি দ্বীপে ভূমিকম্প-পরবর্তী সুনামির আঘাতে ৮৩২ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটে।