নন-লাইফ বীমা খাতে ২৬৩৫ কোটি টাকার দাবি অনিষ্পন্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের নন-লাইফ বীমা খাতে ২ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকার বীমা দাবি অনিষ্পন্ন রয়েছে।যা খাতটিতে উত্থাপিত মোট বীমা দাবির ৬৮ শতাংশ। বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
সরকারি-বেসরকারি ৪৬টি নন-লাইফ বীমা কোম্পানির পাঠানো ২০২৪ সালের অনিরীক্ষিত তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ।সংস্থাটির ওয়েবসাইটে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
অনিষ্পন্ন বীমা দাবির এই হারকে অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বীমা আইনে ৯০ দিনের মধ্যে দাবি নিষ্পত্তির বিধান রাখা হয়েছে। এর অধিক সময় বীমা দাবি অনিষ্পন্ন রাখলে খাতটিতে আরো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বীমা খাতের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরাতে অবশ্যই আইনে বেধে দেয়া সময়ের মধ্যেই বীমা দাবি নিষ্পত্তি করতে হবে। এক্ষেত্রে গ্রাহক স্বার্থ রক্ষায় নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আরো জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে বলে মনে করেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
অপরিদকে আইডিআরএ বলছে, যেসব বীমা কোম্পানির দাবি নিষ্পত্তির হার খুবই কম সেগুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক্ষেত্রে খুব শিগগিরই কোম্পানিগুলোর পরিচালকদের সাথে গভার্ন্যান্স রিভিউ সভা আহবান করা হবে বলে জানান সংস্থাটির উপ-পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সোলায়মান।
আইডিআরএ’র প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের নন-লাইফ বীমা খাতে পুঞ্জিভূত অনিষ্পন্ন দাবির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৮৭১ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ২৩৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা বা ৩২ শতাংশ বীমা দাবি নিষ্পত্তি করা হয় ২০২৪ সালে।
এই হিসাবে ২ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকার বীমা দাবি অনিষ্পন্ন রয়েছে। যা খাতটিতে পুঞ্জিভূত অনিষ্পন্ন বীমা দাবির ৬৮ শতাংশ।
প্রতিবেদনের তথ্য মতে, বেসরকারি খাতে সর্বোচ্চ বীমা দাবি অনিষ্পন্ন রয়েছে গ্রিণ ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সে। কোম্পানিটির ২৫৭ কোটি ২৯ লাখ টাকার বীমা দাবি অনিষ্পন্ন রয়েছে, যা ৬৫ শতাংশ।
আর শতাংশের হিসাবে এ খাতে সর্বোচ্চ বীমা দাবি অনিষ্পন্ন রয়েছে সিকদার ইন্স্যুরেন্সে, ৯৪.৮৩ শতাংশ; কোম্পানিটির মোট অনিষ্পন্ন দাবির পরিমাণ ২৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।
অপরদিকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সাধারণ বীমা করপোরেশনে অনিষ্পন্ন বীমা দাবির পরিমাণ ১ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা, যা নন-লাইফ বীমা খাতে উত্থাপিত মোট বকেয়া দাবির প্রায় ৫৪ শতাংশ।
এ ছাড়াও উল্লেখযোগ্যভাবে প্রগতি ইন্স্যুরেন্সে ৮৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সে ৯৮ কোটি ৯ লাখ টাকা, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সে ৮৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সে ২৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা, নর্দার্ন ইসলামী ইন্স্যুরেন্সে ৬১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, পিপলস ইন্স্যুরেন্সে ৭৪ কোটি ১২ লাখ টাকা, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সে ৭১ কোটি ৮৬ লাখ টাকার বীমা দাবি অনিষ্পন্ন রয়েছে।
অপরদিকে ২০২৪ সালে একশ’ কোটি টাকার ওপর বীমা দাবি পরিশোধ করেছে ৪টি কোম্পানি।এর মধ্যে রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স ১৫৭ কোটি ২ লাখ টাকা; গ্রিণ ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স ১৩৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স ১২২ কোটি ৪ লাখ টাকা এবং সাধারণ বীমা করপোরেশন ১৯৫ কোটি ১৩ লাখ টাকার দাবি পরিশোধ করেছে।