আর্থিক প্রতিবেদন- ২০২০

প্রিমিয়াম আয়ের সাড়ে ৪ কোটি টাকার হিসাব দেয়নি সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স

আবদুর রহমান আবির: ২০২০ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার প্রিমিয়াম আয়ের হিসাব দেয়নি সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স। গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ ও সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিতে প্রিমিয়াম আয়ের এই তথ্য গোপনের অভিযোগ উঠেছে বীমা কোম্পানিটির বিরুদ্ধে। ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র অনুসন্ধানে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

বীমা কোম্পানিটির ব্যাংক একাউন্টে জমা করা প্রিমিয়ামের হিসাব ও আর্থিক প্রতিবেদনে প্রদর্শিত প্রিমিয়াম আয়ের তথ্য পর্যালোচনা করা হয় ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র এই অনুসন্ধানে। এ ছাড়াও কোম্পানিটির ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনের নিরীক্ষিত তথ্যও স্থান পেয়েছে এই অনুসন্ধানে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, নন-লাইফ বীমা খাতে প্রিমিয়াম আয়ের তথ্য গোপন করে রাজস্ব ফাঁকি ও অবৈধ কমিশন বন্ধ করতে ২০১৯ সালে ৩টি ব্যাংক একাউন্টে প্রিমিয়াম জমার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে ৬৪ নং সার্কুলার জারি করে বীমা খাত নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।

তবে সাধারণ বীমা করপোরেশন থেকে প্রাপ্য পিএসবি বা সরকারি সম্পত্তি বীমার টাকা এই ৩টি ব্যাংক একাউন্টে জমা হয় না।

নিয়ম অনুসারে, গ্রাহকের জমা করা প্রিমিয়ামের টাকা থেকে ভ্যাট ও স্ট্যাম্পের টাকা সরকারের রাজস্ব হিসাবে জমা দেয়া হয়। বাকি টাকার হিসাব দিতে হয় আর্থিক প্রতিবেদনে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড ও এনসিসি ব্যাংক লিমিটেডে একটি করে মোট ৩টি ব্যাংক একাউন্টে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রিমিয়াম এবং ভ্যাট ও স্ট্যাম্পের টাকা জমা নেয় সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স। 

২০২০ সালে কোম্পানিটির এসব একাউন্টে প্রিমিয়াম ও ভ্যাট স্ট্যাম্প বাবদ জমা হয় ৪৫ কোটি ৪৯ লাখ ৯৮ হাজার ৪৯৭ টাকা। ব্যাংক একাউন্টগুলোতে গ্রাহকের জমা করা এই টাকা থেকে রিটার্ন করেছে ১ কোটি ২ লাখ ২৯ হাজার ৬৫ টাকা।

অর্থাৎ প্রিমিয়াম, ভ্যাট ও স্ট্যাম্প বাবদ ব্যাংক একাউন্টে প্রকৃত জমা হয় ৪৪ কোটি ৪৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৩২ টাকা।

অথচ বীমা কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনের হিসাব অনুসারে, পিএসবি বাদ দিয়ে সরাসরি প্রিমিয়াম আয় ৩১ কোটি ৮১ লাখ ১৬ হাজার ২৫৩ টাকা।

সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের ২০২০ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে ভ্যাট ও স্ট্যাম্প ডিউটির তথ্য নেই।

তবে ২০২১ সালের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনের নিরীক্ষিত তথ্য অনুসারে ২০২০ সালে কোম্পানিটি ভ্যাট পরিশোধ করেছে ৪ কোটি ১৯ লাখ ৯৬ হাজার টাকা ১৫৬ টাকা এবং স্ট্যাম্প ডিউটি পরিশোধ ১ কোটি ১৪ লাখ ৫১ হাজার ৪৩৭ টাকা। 

কোম্পানিটির ব্যাংক একাউন্টে মোট জমাকৃত টাকা থেকে ভ্যাট ও স্ট্যাম্পের টাকা বাদ দেয়া হলে প্রিমিয়াম বাবদ জমাকৃত টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৯ কোটি ১৩ লাখ ২১ হাজার ৮৩৯ টাকা।

এ ছাড়াও আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে ২০১৯ সালে কোম্পানিটির ডিপোজিট প্রিমিয়াম ছিল ২ কোটি ১৭ লাখ ৯২ হাজার ৩৬২ টাকা।

উল্লেখ্য, নৌ বীমার কভার নোটের বিপরীতে জমা নেয়া প্রিমিয়াম শিপমেন্ট এডভাইস না পাওয়া পর্যন্ত ডিপোজিট প্রিমিয়াম হিসেবে দেখানো হয়। পরে শিপমেন্ট এডভাইস পাওয়ার পর কভার নোটটি বীমা পলিসিতে রূপান্তরিত হয় এবং ডিপোজিট প্রিমিয়ামকে কোম্পানির প্রিমিয়াম আয় হিসেবে প্রদর্শন করতে হয়।

এক্ষেত্রে বিধান অনুসারে, প্রতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে কোন কভার নোটের শিপমেন্ট এডভাইস না পাওয়া গেলেও পরবর্তী মাস তথা অক্টোবরে ওই কভার নোট স্বয়ংক্রিয়ভাবে নৌ বীমা পলিসিতে রূপান্তরিত হয়।

এই হিসেবে ২০১৯ সালের ডিপোজিট প্রিমিয়াম ২০২০ সালের ব্যাংক একাউন্টে জমা করা প্রিমিয়াম সাথে যোগ করা হলে অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের মোট প্রিমিয়ামের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪১ কোটি ৩১ লাখ ১৪ হাজার ২০১ টাকা।

অপরদিকে আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে ২০২০ সালের ডিপোজিট প্রিমিয়াম ৫ কোটি ৬ লাখ ৭৭ হাজার ২৭৩ টাকা।

নিয়ম অনুসারে ২০২০ সালের ডিপোজিট প্রিমিয়াম মোট প্রিমিয়াম থেকে বাদ দেয়া হলে কোম্পানিটির সরাসরি প্রিমিয়াম আয় দাঁড়ায় ৩৬ কোটি ২৪ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৮ টাকা।

কিন্তু সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স ২০২০ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে সরাসরি প্রিমিয়াম আয় দেখিয়েছে ৩১ কোটি ৮১ লাখ ১৬ হাজার ২৫৩ টাকা।

অর্থাৎ ২০২০ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে ৪ কোটি ৪৩ লাখ ২০ হাজার ৬৭৫ টাকার প্রিমিয়াম গোপন করেছে সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি।

এই টাকার ১৫ শতাংশ ভ্যাট ধরা হলে কোম্পানিটি সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে ৬ লাখ ৬৩ হাজার ১০১ টাকা।

এ ছাড়াও স্ট্যাম্প ডিউটির অর্থ এই হিসাবে যুক্ত করা হলে রাজস্ব ফাঁকির এই অংক আরো বাড়বে।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র পক্ষ থেকে সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়, তবে বীমা কোম্পানিটির পক্ষ থেকে কোন বক্তব্য দেয়া হয়নি।