নন-লাইফে ৭৫ নং সার্কুলার বাস্তবায়নে যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন

 মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদ: বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ নন-লাইফ বীমা শিল্পের উন্নয়নে তাঁদের আন্তরিকতার স্বাক্ষর রেখেই চলেছেন। ২০১৯ইং সালের আগস্ট মাস থেকে ব্যাংক হিসাব নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন এবং এজেন্ট কমিশন বাস্তবায়নে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কিছু সংখ্যক কোম্পানির অনৈতিক ব্যবসা আহরণের কারণে মার্কেটকে স্থিতিশীল অবস্থায় রাখা কোনভাবেই সম্ভব হচ্ছিল না।

অভিনব কায়দায় তারা অতিরিক্ত কমিশন দিয়ে অন্য কোম্পানির ব্যবসা ছিনিয়ে নিজেদের করায়াত্ত করে নিচ্ছে। বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে বিভিন্ন অভিযোগ আসলেও সকল সমস্যার সমাধান কোন সংস্থার পক্ষেই সম্ভব হয়নি।

এই ব্যাপারে ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি তাদের অন লাইন পত্রিকায় এই অভিনব কমিশনের বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে ০৯/০২/২০২০ইং তারিখে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই মনে হয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ অনেকটা বাধ্য হয়েই মার্কেট নিয়ন্ত্রণের জন্য ৭৫নং সার্কুলার জারি করেছেন যাতে বীমা শিল্পের অস্থিরতা দূর হয় আর যারা অস্থিরতা সৃষ্টি করছে তাদেরকে শায়েস্তা করা যায়।

নন-লাইফ বীমা শিল্পের ব্যবসায় শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই সেই সাথে ৭৫নং সার্কুলার জারির সাথে সাথে তা বাস্তবায়নযোগ্য নির্দেশনাগুলো স্পস্ট করলে নন-লাইফ বীমা শিল্প সবিশেষ উপকৃত হতো। নন-লাইফ বীমার কর্মীরা সার্কুলারের কারণে দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগছেন যেমন:-

১। বর্তমানে উন্নয়ন কর্মকর্তাদের একটি নির্ধারিত পদবী এবং বেতন স্কেল আছে।

২। ফ্যাসটিবল বোনাস ও ইনসেটিভ বোনাস ইত্যাদি কোম্পানি নিয়ম অনুযায়ী ভোগ করেন।

৩। প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুইটি ইত্যাদি সুবিধা কোন কোন কোম্পানি দিয়ে থাকে।

৪। শাখা ব্যবস্থাপকগণ গাড়ীসহ অন্যান্য সুবিধাদি ভোগ করেন।

৫। উন্নয়ন কর্মকর্তাদের এজেন্ট হিসাবে পদায়ন করতে হলে তাদের আবার এজেন্ট ট্রেনিং-এর প্রয়োজন হবে কিনা? নাকি তারা উন্নয়ন কর্মকর্তা থেকে সরাসরি এজেন্ট হিসাবে কাজ করবেন তার নির্দেশনা প্রয়োজন।

৬। এজেন্ট হিসাবে কাজ করতে হলে তাঁদের ৭২ ঘন্টার আবার ট্রেনিং নিতে হবে কিনা? নাকি আইডিআরএ সার্ভিস চার্জ দিয়েই তারা এজেন্ট লাইসেন্স প্রাপ্ত হবেন তা পরিস্কার নয়।

৭। যারা দীর্ঘদিন উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করে আজ এডিশনাল এম.ডি, ডি.এম.ডি, এসিষ্ট্যান্ট এম.ডি ইত্যাদি পদ অলংকার করে আছেন তারা এজেন্টের কোন স্তরে অবস্থান করবেন? সামাজিকভাবে এবং ব্যবসায়ী সমাজে তাঁরা ঐ পদবীতেই পরিচিত। কারণ লাইফ ব্যবসায় বিভিন্ন স্তর আছে কিন্তু নন-লাইফ ব্যবসায় উন্নয়ন কর্মকর্তাদের পদবীই স্তর।

৮। নন-লাইফ বীমা কোম্পানির বেতন-ভাতা বাৎসরিক ভিত্তিতে নীট প্রিমিয়ামের ১০ শতাংশের বেশী ব্যয় করা যাবে না সার্কুলারে উল্লেখ আছে কিন্তু বাস্তবে বড় দুই চারটা কোম্পানির ক্ষেত্রে সম্ভব হলেও অন্যদের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয় (শুধুমাত্র অফিস ষ্টাফ ও অফিসার ডেক্স এর ক্ষেত্রেও তা সম্ভব নহে)।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অন্যান্য সার্কুলারের মতো আমরা চাই ৭৫ নং সার্কুলাটি সম্মানের সাথে বাস্তবায়িত হউক। বাস্তবায়িত হলে বীমা শিল্পে স্থিরতা ফিরে আসবে। বীমা শিল্পে কর্মকর্তাদের মান-সম্মান এবং জাতীয় রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে। তবে বাস্তবায়নে আমাদের সার্বিক নির্দেশনা দানে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন ও ইন্স্যুরেন্স ফোরামকে এগিয়ে আসতে হবে।

উন্নয়ন কর্মকর্তাদের পদ-পদবী, আর্থিক সুযোগ সুবিধা ইত্যাদিকে প্রধান্য দিয়ে সমস্যার সমাধান করতে হবে, না হলে অনেক উন্নয়ন কর্মকর্তা ও ডেক্স কর্মকর্তাগণকে চাকুরী হারিয়ে পথে পথে ঘুরতে হবে তা কোন পক্ষেরই কাম্য হতে পারে না।

তাছাড়া সবচেয়ে বেশী জরুরি পত্রিকা, রেডিও, টিভি, বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠন, ব্যাংকসহ সকল পক্ষকে জানিয়ে দিতে হবে যে, নন-লাইফ বীমা শিল্পে এখন থেকে কমিশন প্রথা বাতিল করা হয়েছে।

সকল উন্নয়ন কর্মকর্তাগণকে অসহিষ্ণু না হয়ে ধৈর্য্য ও সহনশীলতার সাথে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা দরকার। নিশ্চয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন ও ইন্স্যুরেন্স ফোরাম যৌথভাবে কাজ করে সর্বজন গ্রহণযোগ্য একটি সমাধানে পৌঁছাতে পারবে। অন্যথায় সব অর্জন ম্লান হয়ে যাবে।

লেখক: ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, ইসলামী কমাশিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।