বাংলাদেশের বীমা খাতে প্রতিভা ব্যবস্থাপনার কৌশল

রাজ কিরণ দাস: বাংলাদেশের বীমা খাত বর্তমানে দ্রুত পরিবর্তনশীল এক বাস্তবতার মুখোমুখি। ডিজিটালাইজেশন, গ্রাহকের বাড়তি প্রত্যাশা, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও প্রযুক্তির ব্যবহার এই খাতকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। শুধু ব্যবসায়িক মডেল নয়, বরং প্রতিভা ব্যবস্থাপনার কৌশলকেও আধুনিকভাবে সাজানো এখন অপরিহার্য। কারণ, দক্ষ, উদ্ভাবনী ও অভিযোজনক্ষম মানবসম্পদ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে প্রবৃদ্ধি টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।

দেশের বীমা খাত দীর্ঘদিন ধরে আস্থার সংকট, দুর্বল ডিজিটাল অবকাঠামো এবং দক্ষ জনশক্তির অভাবের মতো সমস্যায় ভুগছে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) এবং অনলাইন প্রিমিয়াম পরিশোধের সুযোগ গ্রাহক সেবায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে, তবে এখনও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান প্রচলিত মডেলের বাইরে আসতে পারেননি। আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা বলছে, গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা ও ডিজিটাল উদ্ভাবনের মাধ্যমে বীমা খাতকে পুনর্গঠন করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে প্রতিভা ব্যবস্থাপনার আধুনিক কৌশল গ্রহণ করা জরুরি।

প্রতিভা ব্যবস্থাপনায় মূল অগ্রাধিকার

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বীমা খাতের প্রতিভা কৌশলের চারটি গুরুত্বপূর্ণ দিকের ওপর নজর দেওয়া প্রয়োজন। তা হলো-

কৌশল ও দক্ষতা উন্নয়ন: স্থানীয় বাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতা চিহ্নিত করে এর উন্নয়ন ঘটাতে হবে। সেই সঙ্গে প্রযুক্তি, ডেটা অ্যানালিটিক্স ও গ্রাহকসেবায় প্রশিক্ষণ বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে।

এইচআর সিস্টেম ও প্রযুক্তি ব্যবহার: আধুনিক এইচআরআইএস ও ডেটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করতে হবে। তথ্য নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়ম মেনে চলার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।

কর্মীদের অভিজ্ঞতা উন্নয়ন: তরুণ প্রজন্মকে আকর্ষণ করতে উন্মুক্ত ও সুন্দর কাজের পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে ও অনলাইন প্রশিক্ষণের সুযোগ বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে কর্মীদের চাহিদাভিত্তিক পেশাগত উন্নয়নের জন্য কার্যকর পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে।

পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা: সাংগঠনিক পরিবর্তন নিয়ে স্পষ্ট বার্তা প্রদান করাসহ প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে কর্মীদের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। বড় রকমের সংস্কার বাস্তবায়নে ‘চেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার’ গড়ে তুলতে হবে।

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৮০টিরও বেশি বীমা কোম্পানি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কিন্তু প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতে হলে প্রতিভা উন্নয়ন, ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার এবং মানবকেন্দ্রিক পরিবর্তন ব্যবস্থাপনার কোনো বিকল্প নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, তরুণ প্রজন্মের ডিজিটাল দক্ষতা কাজে লাগিয়ে বীমা শিল্পে নতুন প্রবৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করা সম্ভব।

আন্তর্জাতিকভাবে সিয়া পার্টনার্সের মতো কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান দেখিয়েছে, কীভাবে এইচআর রূপান্তর, মাইক্রোলার্নিং প্ল্যাটফর্ম ও ডেটা সায়েন্স সমাধান প্রতিভা ব্যবস্থাপনাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশে এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে বীমা খাত শুধু আস্থা পুনর্গঠনেই নয়, বরং আঞ্চলিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সক্ষমতাও অর্জন করবে।