১২ কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগ: প্রমাণ দিতে পারেননি স্বদেশ লাইফের বর্তমান চেয়ারম্যান
নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নুরুল আলম চৌধুরীকে ১২ কোটি টাকা দিয়েছেন এমন লিখিত অভিযোগ করলেও লেনদেন সংক্রান্ত চেক বা পে-অর্ডার সংক্রান্ত কোন নথিপত্র দিতে পারেননি স্বদেশ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বর্তমান চেয়ারম্যান মো. মাকসুদুর রহমান।
অভিযোগটির সত্যতার বিষয়ে জানতে চাইলে মাকসুদুর রহমান সেই ১২ কোটি টাকা দেয়ার পে-অর্ডার তার কাছে সংরক্ষিত আছে বলে দাবি করেন। একইসাথে পে-অর্ডারের কপি কয়েক দিনের মধ্যে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’কে পাঠাবেন বলে নিশ্চিত করেন।
পরে দফায় দফায় ওই পে-অর্ডার বা চেকের কপি অথবা ব্যাংক স্টেটমেন্ট চাওয়া হলেও একাধিকবার সময় নেন কিন্তু এসব নথিপত্র তিনি ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’কে পাঠাননি। একপর্যায়ে কোম্পানির চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে আর কোন সারা মেলেনি।
অপর দিকে নুরুল আলম চৌধুরীকে ১২ কোটি টাকা প্রদান ও তার মানি রিসিট না পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে মাকসুদুর রহমানের পাঠানো চিঠি প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন নুরুল আলম চৌধুরী। তবে অভিযোগের বিষয়টি তিনি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। একইসঙ্গে অভিযোগটির বিষয়ে মাকসুদুর রহমানকে প্রশ্ন করেছেন কিন্তু কোন জবাব দিতে পারেননি বলে জানান নুরুল আলম চৌধুরী।
মাকসুদুর রহমান ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল নুরুল আলম চৌধুরীকে এ বিষয়ে চিঠি লেখেন।
চিঠিতে মাকসুদুর রহমান দাবি করেন- এই ১২ কোটি টাকা তিনি দিয়েছেন শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রকে অনুদান দেয়ার জন্য। কোম্পানির অনুমোদনের সময় দু’জন স্পন্সর ডাইরেক্টর ৬ কোটি টাকা করে মোট ১২ কোটি টাকা নুরুল আলম চৌধুরীকে দিয়েছেন। কোম্পানির অনুমোদন নেয়ার জন্য পে-অর্ডারের মাধ্যমে এই টাকা দেয়া হয়েছিল।
চিঠিতে আরো উল্লেখ করেন, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৭ বছর নুরুল আলম চৌধুরী কোম্পানির চেয়ারম্যান থাকাকালে সর্বোচ্চ ৩০৮ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় করা হয়েছে। অস্বাভাবিক এই ব্যয়ের জন্য তিনি নুরুল আলম চৌধুরীকে দায়ী করেন।
নুরুল আলম চৌধুরীকে মাকসুদুর রহমানের লেখা এই চিঠির দু’মাস পরে ১ জুন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন নুরুল আলম চৌধুরী। তিনি অভিযোগ করেন ২০২০ সাল থেকে ২০২২ সাল এই ৩ বছরে অস্বাভাবিক ব্যয়, মন্দ ব্যবসাসহ বিভিন্ন প্রকার অনিয়ম হয়েছে।
নুরুল আলম চৌধুরীর অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে গত বছর ২২ আগস্ট ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে আইডিআরএ। কমিটি গত ১০ অক্টোবরে প্রতিবেদন দাখিল করে।
তদন্তে শুরু থেকেই আইন লঙ্ঘন করে অবৈধ ব্যয়, মাত্রাতিরিক্ত কমিশন প্রদান, বর্তমান মুখ্য নির্বাহীকে অবৈধভাবে ইনসেনটিভ প্রদান কোম্পানির মুখ্য নির্বাহীর ব্যক্তিগত প্রিমিয়ামের টাকা লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
তবে নুরুল আলম চৌধুরী কোম্পানির চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় যে পরিমাণ অবৈধ ব্যয় হয়েছে বর্তমানে তা কম হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় তদন্ত প্রতিবেদনে।
এছাড়া তদন্ত প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠার ৫ বছরের মধ্যে শেয়ারবাজারে অন্তর্ভুক্ত হতে না পারা, পরিশোধিত মূলধন হতে উত্তোলনকৃত ৫ কোটি টাকা পুণর্ভরণ না করা, কোম্পানির দায় মূল্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণে কোম্পানিটি ব্যর্থ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
সেই সাথে শুরু থেকেই যারা অবৈধ ব্যয়, মাত্রাতিরিক্ত কমিশন প্রধান ও কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে তদন্ত দল।