আসিয়ান অঞ্চলের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে বীমার সম্প্রসারণে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আসিয়ান অঞ্চলের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা এখন বিশ্বব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যা, নগরায়ণ ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের পাশাপাশি এই অঞ্চলের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক স্থিতিশীলতা ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা। এ প্রেক্ষাপটে প্রুডেনশিয়ালের করা সাম্প্রতিক এক গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করেছে। গবেষণাটি বলছে, জীবন ও স্বাস্থ্য বীমার সম্প্রসারণ শুধু একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থাই নয়, বরং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নের জন্য এক শক্তিশালী অনুঘটক।
‘বিয়ন্ড কাভারেজ- দ্য সোশ্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক ইমপ্যাক্ট অব ইন্স্যুরেন্স ইন আসিয়ান’ শীর্ষক গবেষণায় ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের দুই দশকের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, যদি ২০৫০ সালের মধ্যে জীবন বীমার কভারেজ ৫০ শতাংশ বাড়ানো যায়, তবে মাথাপিছু জিডিপি প্রায় ৫ শতাংশ পর্যন্ত এবং সামগ্রিক জিডিপি ৪ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে, নন-লাইফ বীমা (যার মধ্যে স্বাস্থ্য বীমা অন্তর্ভুক্ত) একই সময়ে ৫০ শতাংশ বাড়ালে মাথাপিছু আয় ৩ শতাংশ পর্যন্ত এবং জিডিপি ২ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেতে পারে।
এই তথ্যগুলো শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, বরং সামাজিক কল্যাণের দিক থেকেও বীমার গুরুত্বকে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত করে।
বীমা মানুষের জীবনে আর্থিক নিরাপত্তা আনে। স্বাস্থ্য বীমা চিকিৎসার খরচ কমিয়ে জীবনমান উন্নত করে, ফলে শ্রমশক্তি সুস্থ থাকে এবং কর্মক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বাড়ে। জীবন বীমা পরিবারকে আর্থিক সুরক্ষা দিয়ে ঝুঁকি কমায়। এর ফলে মানুষ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে সক্ষম হয়, যা অর্থনৈতিক কার্যক্রমে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এক কথায়, বীমা খাত শ্রমশক্তি ও মানবসম্পদের উন্নয়নে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে।
প্রুডেনশিয়ালের প্রস্তাব স্পষ্ট করেছে যে, স্বল্পমেয়াদে কর প্রণোদনা, যেমন প্রিমিয়ামে ট্যাক্স ছাড় এবং সহায়ক নীতিমালা বীমা খাতকে গতিশীল করবে। একই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে দক্ষ জনবল তৈরি, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধিই হবে আসল চ্যালেঞ্জ।
নীতিনির্ধারকদের জন্য এখানে একটি বড় সুযোগ রয়েছে- বীমাকে অর্থনৈতিক পরিকল্পনার কেন্দ্রে নিয়ে আসা। কারণ বীমা কেবল সংকটের সময় সুরক্ষা দেয় না, বরং বিনিয়োগ, অবকাঠামো, সবুজ জ্বালানি এবং মানবসম্পদে মূলধন প্রবাহ ঘটিয়ে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে।
তবে এই অগ্রযাত্রা সহজ নয়। আসিয়ানের বহু দেশে এখনও গ্রামীণ জনগোষ্ঠী বীমাকে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হিসেবে দেখে। বীমা প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থার ঘাটতিও একটি বড় বাধা। তাই শুধু নীতিমালা নয়, স্বচ্ছতা, বিশ্বাসযোগ্যতা এবং জনসচেতনতা তৈরি হবে এই খাতের দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের শর্ত।
আসিয়ানের অর্থনীতি আজ বৈশ্বিক সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে। এই মুহূর্তে জীবন ও স্বাস্থ্যবীমার প্রসারকে কেবল আর্থিক নিরাপত্তা নয়, বরং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও টেকসই ভবিষ্যতের কৌশলগত বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে হবে। (সংবাদ সূত্র: ইন্স্যুরেন্স এশিয়া)